মর্টগেজ লোন বা বন্ধকী ঋণ নেওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা?

মর্টগেজ লোন বা বন্ধকী ঋণ নেওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা?

যারা প্রাপ্ত সম্পদ বন্ধক বা জমির দলিল দিয়ে লোন নিতে চায় তাদের মর্টগেজ লোন বা বন্ধকী ঋণ এর আওতায় লোন নিতে হয়। মর্টগেজ লোন বা বন্ধকী ঋণ নেওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জেনে বুঝে তারপর আপনাকে লোন নেওয়ার জন্য ডিসিশন নিতে হবে। কেননা আপনি যদি লোন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার সম্পদ ঋণদাতা দখল করতে পারবে।

যাইহোক, আপনি যদি এখনো মর্টগেজ লোন সম্পর্কে না জেনে থাকেন যে আপনি কিভাবে জমির দলিল দিয়ে লোন নিতে পারবেন, এই সম্পর্কে আমরা একটি বিস্তারিত আর্টিকেল পাবলিশ করেছি, যেটি পড়ার মাধ্যমে আপনি মর্টগেজ লোন সম্পর্কে আরো ধারণা লাভ করবেন।
মর্টগেজ লোন
মর্টগেজ লোন

যাইহোক, আজকে আমরা ওই দিকে যাচ্ছি না, আমরা আজকে মর্টগেজ লোন বা বন্ধকী ঋণের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব, এবং আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব যে এই ধরনের ঋণ নেওয়া আপনার জন্য সার্থক হবে কিনা সে ধরনের একটি মতামত দেওয়ার চেষ্টা করব।

মর্টগেজ লোন এর সুবিধা ও অসুবিধা?

মর্টগেজ লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে যেমন আপনি যদি সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার সম্পদ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হতে জব্দ করা হতে পারে। 

একই সাথে আপনার সুবিধাও আছে, যেমন আপনি মোটা অংকের টাকা পরিমাণ ঋণ সহায়তা পেতে পারেন, যা আপনার নতুন প্রকল্পে কাজে লাগাতে পারেন। যাইহোক, আমরা প্রথমে সুবিধা গুলো দেখব এবং তারপর এর অসুবিধা গুলো দেখবো।

মর্টগেজ লোন এর সুবিধা সমূহ?

আপনি জমি বন্ধক দিয়ে লোন নিতে পারেন, যখন আপনার এমন কোন আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হয় তখন আপনার অধিক পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হয় যা আপনার কাছে নগদ নেই। সেই ক্ষেত্রে মর্টগেজ লোন নিতে পারেন এবং এর বড় সুবিধাটি হল আপনার জমি বিক্রি করতে হয় না বরঞ্চ আপনি আপনার জমি বন্ধক রেখে মোট সম্পদের ৬০% থেকে ৮০% শতাংশ লোন নিতে পারেন।

 এবং এমনকি আপনার জমি নিজেই ভোগ করতে পারেন। নিচে কয়েকটি সুবিধা দেওয়া হয়েছেঃ

মোটা অংকের লোন পাওয়া যায়

মানুষ এই জন্যই বন্ধুকী লোন নিতে আগ্রহী যে সে একসাথে অনেকগুলো টাকা পাবে, আর তাই এটি হল সবচেয়ে বড় কারন যে আপনি বন্ধকী ঋণ নিতে চান। অবশ্যই লোনের পরিমাণ আপনার সম্পদের উপর নির্ভর করবে আপনি কতটুকু সম্পদ বন্ধক রাখতে চাচ্ছেন।

নমনীয় পরিশোধের শর্তাবলী

বাংলাদেশের অধিকাংশ বন্ধকী ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাদের নমনীয় পরিশোধের শর্তাবলী অফার করে। এর মানে হল যে ঋণগ্রহীতারা তাদের আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক কিস্তিতে তাদের ঋণ ফেরত দিতে একটি কিস্তি কার্যক্রম বেছে নিতে পারেন।

দীর্ঘতর ঋণের মেয়াদ

বন্ধকী ঋণ সাধারণত দীর্ঘ ঋণের মেয়াদের হয়ে থাকে, যা সাধারণত ৫ থেকে ২০ বছর কিংবা এর বেশিও হতে পারে। এটি ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট সময়।

জামানত-মুক্ত ঋণ

বাংলাদেশে বেশিরভাগ ঋণদাতা জামানত-মুক্ত বন্ধকী ঋণ অফার করে, যার অর্থ ঋণগ্রহীতা তার সম্পত্তি নিজেই ভোগ করতে পারবে। এর জন্য আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ দিচ্ছেন।

ট্যাক্স বেনিফিট

বাংলাদেশের ঋণগ্রহীতারা তাদের বন্ধক ঋণ পরিশোধের উপর কর সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। বাংলাদেশ সরকার বন্ধক ঋণের উপর প্রদত্ত সুদের উপর কর ছাড়ের অনুমতি দেয়, যা ঋণগ্রহীতাদের অর্থ সাশ্রয় করতে সহায়তা করে।

মর্টগেজ লোন এর অসুবিধা সমূহ?

বন্ধকী ঋণ নেওয়ার অনেক সুবিধা থাকলেও, এর কিছু সম্ভাব্য অসুবিধাও রয়েছে যেগুলো উপর ঋণগ্রহীতাদের সচেতন হওয়া উচিতঃ

উচ্চ সুদের হার

বাংলাদেশে বন্ধকী ঋণের সুদের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। যা সাধারণত সুদের হার ১২% থেকে ১৫% হয়ে থাকে। যদিও ইন্ডিয়াতে তুলনামূলক একটু কম। তবে কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনাই কম।

উচ্চ প্রক্রিয়াকরণ ফি

কিছু কিছু বন্ধকী ঋণদাতা বন্ধকী ঋণের জন্য উচ্চ প্রক্রিয়াকরণ ফি নেয়, যা এটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পর্যন্ত যোগ হতে পারে। ঋণগ্রহীতাদের বন্ধকী ঋণ চুক্তির শর্তাবলী সাবধানে পর্যালোচনা করা উচিত যাতে ঋণের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত ফি এবং চার্জ বোঝতে পারেন।

ফোরক্লোজারের ঝুঁকি

যদি ঋণগ্রহীতা বন্ধকী ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা ফোরক্লোজারের মাধ্যমে তাদের জামানতকৃত সম্পদ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। 

ফোরক্লোজার হল একটি আইনি প্রক্রিয়া যেখানে ঋণদাতা সম্পত্তির দখল নিতে পারে এবং বকেয়া ঋণের পরিমাণ পুনরুদ্ধার করতে এটি বিক্রিও করতে পারে। ঋণগ্রহীতাদের নিশ্চিত হওয়া উচিত যে তাদের আয়ের একটি স্থিতিশীল উৎস রয়েছে, কেননা আপনার ঋণ পরিশোধে সক্ষম হতে হবে।

সুদের হার ওঠানামা করে

বন্ধকী ঋণের সুদের হার বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণের উপর ভিত্তি করে ওঠানামা করতে পারে। ঋণগ্রহীতাদের পরিবর্তনশীল সুদের হার সম্পর্কিত ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। 

যদি তারা তাদের মাসিক অর্থপ্রদানে স্থিতিশীলতা সুদের হার পছন্দ করেন তাহলে একটি নির্দিষ্ট সুদের হার যুক্ত একটি ঋণ বেছে নিতে পারেন।

দীর্ঘ অনুমোদন প্রক্রিয়া

বন্ধকী ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে, যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য একটু অসুবিধা হতে পারে যাদের দ্রুত অর্থায়ন প্রয়োজন। ঋণগ্রহীতাদের বিস্তৃত নথিপত্র সরবরাহ করতে হবে এবং তাদের ঋণ অনুমোদনের আগে যাচাইয়ের বেশ কয়েকটি রাউন্ডের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যা এটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হতে পারে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে লোন কার্যক্রম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

বন্ধকী ঋণ নেওয়ার জন্য কী কী কাগজপত্র লাগবে?

আপনি যদি বন্ধকী ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনাকে সাধারণত আপনার ঋণদাতাকে নিম্নলিখিত নথি প্রদান করতে হবেঃ

ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট

আপনাকে পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে একটি বৈধ জাতীয় আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট প্রদান করতে হবে।

আয়ের নথি

আপনাকে আপনার আয়ের প্রমাণ দিতে হবে, যেমন বেতন স্লিপ, আয়কর রিটার্ন বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট। আপনি যদি স্ব-কর্মী হন, তাহলে আপনাকে ব্যবসার আর্থিক বিবৃতি বা নিরীক্ষিত আর্থিক বিবৃতি প্রদান করতে হবে।

বন্ধকযোগ্য সম্পদের দলিলপত্র

আপনাকে অবশ্যই আপনার বন্ধকযোগ্য সম্পদের অরিজিনাল দলিল নিয়ে যেতে হবে এবং সাথে বায়া দলিল সহ খতিয়ান সমূহ লাগবে।

জামিনদারের কাগজপত্র

আপনি না থাকাকালীন লোনকৃত অর্থের দায়ভার কে নেবে, তার একটি জামিনদার কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

ব্যাংক স্টেটমেন্ট

আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা যাচাই করার জন্য আপনাকে গত এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদান করতে হবে।

ফটোগ্রাফ

আপনাকে আপনার নিজের পাসপোর্ট-আকারের ছবি প্রদান করতে হবে।

ক্রেডিট রিপোর্ট

আপনার ক্রেডিট যোগ্যতা দেখানোর জন্য আপনাকে ক্রেডিট রিপোর্ট প্রদান করতে হবে।

ইউটিলিটি বিলের কপি বা ফটোকপি

বিদ্যুৎ বিলের কপি বা ফটোকপি প্রয়োজন হবে।

ডাউন পেমেন্টের প্রমাণ

আপনাকে আপনার ডাউন পেমেন্ট প্রদান করতে হবে, যেমন ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা ইনভেস্টমেন্ট অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট।

সম্পত্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদন

আপনি যে সম্পত্তি ক্রয় করছেন বা পুনঃঅর্থায়ন করছেন তার বর্তমান বাজার মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি সম্পত্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদনের প্রয়োজন হতে পারে। এই নথিগুলি একটি বন্ধকী ঋণের জন্য আপনার যোগ্যতা যাচাই করতে এবং আপনি যে পরিমাণ ঋণের জন্য যোগ্য তা নির্ধারণ করতে প্রয়োজনীয়। 

এই সমস্ত নথি গুলো বিভিন্ন কারণে বাড়তে পারে বা কমতে পারে। যেমন চাকরি ক্ষেত্রে এক ধরনের নথি প্রদান করতে হতে পারে এবং ব্যবসা হলে আরেক ধরনের নথিপত্র প্রমাণ দেখাতে হতে পারে।

যাইহোক, আপনার ঋণদাতা বা মর্টগেজ দালালকে আপনার নির্দিষ্ট ঋণের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলির একটি বিস্তৃত তালিকার জন্য জিজ্ঞাসা করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ঋণদাতা এবং ঋণের ধরনের উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয়তা পরিবর্তিত হতে পারে।

শেষ কথা

আমরা আশা করছি আপনি একটি খুব ভালো ধারণা পেয়েছেন যে বন্ধকী ঋণের সুবিধা এবং অসুবিধার উপর। যদিও আমরা উপরে আপনাকে বলেছিলাম যে আমরা একটি কনক্লুশন দেওয়ার চেষ্টা করব।
যাইহোক, এটি নির্ভর করবে আপনার চাহিদার এবং আপনার ফাইনান্সিয়াল স্টেবিলিটির উপর। আপনি যদি লোন নিয়ে একান্তই লাভবান হন তাহলে আপনি লোন নিতে পারেন এবং আপনাকে অবশ্যই লোন পরিশোধের জন্য ভারসাম্য থাকতে হবে।

এবং ফাইনালি, একজন মুসলিম হিসেবে আপনার সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে যে একজন বিশেষজ্ঞ আলেমের সাথে পরামর্শ নিয়ে তারপর মর্টগেজ লোন বা বন্ধকী ঋণ নেওয়ার জন্য ডিসিশন নিতে পারেন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post